সেরা ৮টি প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া
আপনি কি ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করার উপায় খুঁজছেন?
যদি হ্যাঁ, তাহলে একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন।
কেননা আজকের আর্টিকেলে আমি ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করার সেরা কিছু আইডিয়া আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি।
এই প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া গুলোর মাধ্যমে আপনি ফুল টাইম কাজ, চাকরি বা ব্যবসার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
প্যাসিভ ইনকাম কি? (Passive Income Meaning in Bengali)
প্যাসিভ ইনকামকে অনেকটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ইনকাম বলা যায়। অর্থাৎ খুব বেশি কাজ না করে টাকা ইনকাম করার পদ্ধতিকে বলা হয় প্যাসিভ ইনকাম।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি কোনো একটি চাকরি বা ব্যবসা করছেন। এই চাকরি বা ব্যবসা আপনার প্রধান পেশা। আপনি ফুল টাইম এই কাজটি করে অর্থ উপার্জন করে থাকেন।
কিন্তু আপনার চাকরি বা ব্যবসার পাশাপাশি অবসর সময়ে যদি অন্য কোনো কাজ করে টাকা ইনকাম করেন তাহলে সেটা আপনার প্যাসিভ ইনকাম।
প্যাসিভ ইনকামের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার মূল ইনকামের পাশাপাশি পার্ট টাইম কোনো কাজ করে ইনকাম করে নিজের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারেন।
এজন্য বর্তমান সময়ে প্রত্যেকের জন্য একটি প্যাসিভ ইনকামের পথ থাকা জরুরী।
সেরা ৮টি প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া
নিজের মূল পেশা বা কাজের পাশাপাশি ফাঁকা সময়ে অল্প কিছু কাজ করে অর্থ উপার্জন করাকে বলা হয় প্যাসিভ ইনকাম।
অর্থাৎ আপনি সবসময় যে পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জন করেন সেটা আপনার অ্যাক্টিভ ইনকাম (active income) এবং যে কাজ অবসর সময়ে করেন ও খুব বেশি এফোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয় না সেটা প্যাসিভ ইনকাম (passive income)।
ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি প্রতি মাসে হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্ট ইনকাম করতে পারবেন। এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার এবং কাজের দক্ষতা।
তাহলে চলুন বাংলাদেশের সেরা প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া সমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১. ব্লগিং
বর্তমানে বাংলাদেশে সেরা প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্লগিং। ঘরে বসে পার্ট টাইম নিজের ব্লগে লেখালেখি করে প্রতি মাসে ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
ব্লগিং করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। এরপর আপনার ব্লগে নিয়মিত নতুন নতুন আর্টিকেল লিখতে হবে।
যখন আপনার ব্লগে বেশ কিছু ভালো মানের আর্টিকেল লেখা হয়ে যাবে, তখন ব্লগের আর্টিকেলে গুগল এডসেন্স এর বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
ব্লগে লেখালেখির কাজ আপনি নিজের চাকরি বা ব্যবসার পাশাপাশি করতে পারবেন। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় দিয়ে ব্লগিং করলেই প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
২. মোবাইল অ্যাপ তৈরি
ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করার জন্য আপনি নিজের একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করতে পারেন। নিজের এন্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করে গুগল এডমব এর বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
ইন্টারনেটে অনেক ফ্রি অ্যাপ বিল্ডার ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলোর সাহায্যে কোনো ধরনের প্রোগ্রামিং দক্ষতা ছাড়াই খুব কম সময়ে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ বানানো যায়।
তবে আপনি নিজের চাহিদা অনুযায়ী অ্যাপ বানানোর জন্য একজন অ্যাপ ডেভেলপার হায়ার করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে হবে।
এমন অ্যাপ তৈরি করুন যেটা মানুষের কাজে আসবে। এরপর আপনার অ্যাপটিতে গুগল এডমবের বিজ্ঞাপন সেট আপ করে গুগল প্লে স্টোরে পাবলিশ করুন।
তারপর অ্যাপের মার্কেটিং করুন। যত বেশি লোকেরা আপনার অ্যাপটি ডাউনলোড করবে, গুগল এডমব একাউন্টে তত বেশি ইনকাম আপনার হবে।
২. ইউটিউব চ্যানেল
বর্তমানে সহজে অনলাইনে থেকে টাকা ইনকামের জন্য ইউটিউব চ্যানেল তৈরির আইডিয়াটি খুবই জনপ্রিয়। আপনি ইউটিউবে নিজের একটি চ্যানেল বানিয়ে সেখানে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে বাড়িতে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
এজন্য প্রথমে আপনাকে ইউটিউব চ্যানেলের নিশ নির্বাচন করতে হবে। এমন নিশ বা টপিক নির্বাচন করুন যেটার ওপর আপনি নিয়মিত ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।
এরপর একটি ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে সেখানে ভিডিও আপলোড করা শুরু করুন। মনে রাখবেন, অধিক পরিমাণে ভিউস ও সাবস্ক্রাইবার পাওয়ার জন্য ভিডিওর কোয়ালিটি উন্নত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত ভালো মানের ভিডিও আপলোড করতে থাকলে আস্তে আস্তে আপনার ভিউস এবং সাবস্ক্রাইবার বেড়ে যাবে।
চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ভিডিও ওয়াচ টাইম পূরণ হয়ে গেলে ইউটিউব মনিটাইজেশন চালু করতে পারবেন এবং ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম শুরু করতে পারবেন।
৪. ওয়েবসাইট বানিয়ে বিক্রি করুন
স্টুডেন্টদের জন্য সেরা প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া হলো ওয়েবসাইট তৈরি করে বিক্রি করা। এই কাজ আপনি পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম করতে পারবেন।
প্রথমে আপনাকে একটি ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনতে হবে। এরপর WordPress CMS দিয়ে একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করতে হবে এবং ডিজাইন করতে হবে।
ব্লগ বানানোর নিয়মিত নতুন নতুন আর্টিকেল লিখে আপনার ব্লগে পাবলিশ করতে হবে। আপনার যে বিষয়ে ভালো জ্ঞান আছে সে বিষয়েই ব্লগে আর্টিকেল লিখতে পারেন।
যখন আপনার ব্লগে ৪০ থেকে ৫০ টি উন্নত মানের আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়ে যাবে, তখন গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আর গুগল এডসেন্স অনুমোদন হয়ে গেলে আপনি সেই ওয়েবসাইটটি বিক্রি করে ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। একটি নতুন গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়া সাইট সহজেই ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় সেল করা যায়।
যখন আপনি এই কাজে অভিজ্ঞ হয়ে যাবেন তখন প্রতি ২ মাস অন্তর অন্তর এক বা একাধিক সাইটে গুগল এডসেন্স অনুমোদন করাতে পারবেন এবং সাইটগুলো সেল করে ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন।
৫. ড্রপশিপিং
ড্রপশিপিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নিজে প্রোডাক্ট উৎপাদন না করেই বাড়িতে বসে প্রোডাক্ট সেল করা যায়। এটি অন্যতম একটি প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া হিসেবে পরিচিত।
এক্ষেত্রে প্রথমে একটি অনলাইন দোকান বা ই-কমার্স স্টোর তৈরি করতে হয়। আপনি ই-কমার্স ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের মাধ্যমে নিজের অনলাইন দোকান প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
এরপর সেখানে বিভিন্ন পণ্যের ছবি, দাম এবং সম্পূর্ণ ডিটেইলস দিয়ে কনটেন্ট বানাতে হবে। আপনার এই অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে পণ্যের অর্ডার নিতে পারবেন।
যেকোনো পণ্যের অর্ডার পাওয়ার পর অন্য কোনো ই-কমার্স কোম্পানি থেকে পণ্য কিনে তার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে পণ্য প্যাকিং এবং ডেলিভারির দায়িত্বও আপনাকে নিতে হবে না।
তবে এভাবে পণ্য বিক্রির জন্য আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কৌশল ভালোভাবে জানতে হবে। কেননা নিজের অনলাইন স্টোরের প্রচার প্রচারণা সঠিকভাবে করতে না পারলে কাস্টমার পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে যাবে।
৬. স্টক ফটো সেলিং
যদি ছবি তোলা আপনার শখ হয়ে থাকে তাহলে অনলাইনে স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট গুলোতে আপনার তোলার ছবি বিক্রি করে ইনকাম করতে পারেন।
ফটোগ্রাফি করার জন্য ডিএসএলআর ক্যামেরার প্রয়োজন নেই। একটি ভালো ক্যামেরার স্মার্টফোন থাকলেই ফটোগ্রাফির কাজ করা সম্ভব।
Shutterstock, iStock, Getty Images, Adobe Stock এই ধরনের স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটগুলোতে আপনার তোলার ছবিগুলো বিক্রি করতে পারবেন।
৭. অনলাইন কোর্স বিক্রি
আপনার নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকলে সেই বিষয়ে অনলাইন কোর্স তৈরি করি অনলাইনে সেল করতে পারেন।
বর্তমানে অনলাইন কোর্স সেলিং বাংলাদেশের সেরা প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই কাজে আপনাকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হবে না।
শুধুমাত্র যে বিষয়ে আপনি দক্ষ সেই বিষয়ে টিউটোরিয়াল টাইপের ভালো মানের ভিডিও তৈরি করে অনলাইন কোর্স হিসেবে সেল করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিষয়ে আপনার হালকা ধারণা থাকতে হবে এবং কোর্সের মার্কেটিং করতে হবে।
৮. এফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো কোনো ব্রান্ড বা কোম্পানির প্রোডাক্ট প্রচার বা প্রোমোশন করা। এজন্য আপনার একটি অনলাইন ব্লগ বা সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ থাকতে হবে।
আপনাকে বিভিন্ন কোম্পানির এফিলিয়েট প্রোগ্রামে রেজিস্টার করতে হবে এবং বিভিন্ন প্রোডাক্টের এফিলিয়েট লিংক সংগ্রহ করতে হবে।
এরপর সেই এফিলিয়েট লিংক আপনার ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেল অথবা সোশ্যাল মিডিয়া পেইজে শেয়ার করতে হবে। যখন কেউ সেই লিংকের মাধ্যমে প্রোডাক্ট ক্রয় করবে তখন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কমিশন হিসেবে পেয়ে যাবেন।
যদি আপনার ব্লগে প্রচুর ভিজিটর থাকে, সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ বা ইউটিউব চ্যানেলে হাজার হাজার ফলোয়ার বা সাবস্ক্রাইবার থাকে তাহলে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি ভালো ইনকাম করতে পারবেন।
উপসংহার
বাংলাদেশের সেরা প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া গুলো আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। এইসব উপায়ে আপনি নিজের চাকরি বা ব্যবসার পাশাপাশি অনলাইনে পার্ট টাইম কাজ করে মোটামুটি প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন।
উপরে বলা উপায়গুলোর সাহায্যে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘন্টা কাজ করেই ঘরে বসে প্যাসিভ করা সম্ভব। আর যেকোনো একটি কাজে একবার সফলতা অর্জন করতে পারলে সেটা পরবর্তীতে ফুল টাইম হিসেবেও নিতে পারবেন।